রফিক মুহাম্মদ |
রাত পোহাবার কত দেরি…? কবি ফররুখ আহমদের পাঞ্জেরী কবিতার কয়েকটি লাইন আবৃতি করে নিজের ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা আ: মান্নান। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের নেতা গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া ২ বছর যাবত কারাগারে বন্দি। তার মুক্তির জন্য কোনো কার্যকর আন্দোলন আমরা করতে পারিনি। চেয়ারপার্সনের কারামুক্তির দাবিতে রাজপথে কর্মসূচি দিতে কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যর্থ। তৃণমূল নেতাদের পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচির দাবি থাকলেও কোনো কারণে কেন্দ্রীয় নেতারা তা উপেক্ষা করছেন তা আমরা বুঝতে পারছি না। তাইতো বলি আমাদের নেতার মুক্তির আর কত দেরি। সামনে যে রাতের অন্ধকার সেই রাত পোহাবার আর কত দেরি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্য চঞ্চল বলেন, একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সরকার ২বছর কারাগারে আটকে রেখেছে। অথচ তার মুক্তির জন্য আমরা রাজপথে কোনো জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা মনে করি বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে সারাদেশের নেতাকর্মীরা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা কেন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন না তাই এখন সবার কাছে প্রশ্নের বিষয়।
তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে মনে করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ বিষয়ে দলের নীতি-নির্ধারকরা বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির লক্ষে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। আইনিভাবে সম্পূর্ণ জামিন পাওয়ার যোগ্য তিনি তারপরও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যান বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আজ তার কারাবন্দি জীবনের দুই বছর পূর্ণ হলো। দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন-প্রতীকী অনশন আর ঝটিকা বিক্ষোভের বাইরে কার্যকর কোনও প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, সরকারের কঠোর অবস্থান ও খালেদা জিয়ার নির্দেশনা মেনেই তারা রাজপথের আন্দোলন থেকে বিরত রয়েছেন। নানাভাবে তারা জনসচেতনতা তৈরী করছেন। আন্দোলনের সপক্ষে জনমত তৈরী করে খুব শিগগিরই বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে নেতারা জানান।
জনসচেতনতা ও সম্পৃক্ততা তৈরীর লক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দির ২ বছর পূর্ণ হওয়ার দিবসেও দলটি মসজিদে মসজিদে দোয়া এবং লিফলেট বিতরণ করেছে। এ ছাড়া এ উপলক্ষে আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। এভাবেই ধীরে ধীরে তারা আন্দোলনের পথে হাঁটতে চাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার দুই বছর সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। আশঙ্কা করছি সরকার অত্যন্ত হীন উদ্দেশ্যে তাকে এভাবে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের যেকোনো অবনতির জন্য এই সরকারকে সব দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণের সামনে তাদেরকে একদিন আদালতে দাঁড়াতে হবে। তার মুক্তির দাবিতে ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আমরা শিগগিরই রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
তবে রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগে সর্বশেষ আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার বিষয়েও অনেকে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, আপিল বিভাগের নামঞ্জুর হওয়া খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি নিয়ে রিভিউ করার এখনো সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগটি আমরা কাজে লাগাতে চাই।
এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বিশেষ আবেদনে মুক্ত হয়ে বিদেশে যেতে রাজি হবেন না। এটা কেউ চাইতে পারে সমঝোতা করে তাকে বাইরে পাঠাতে। তবে তার মুক্তির বিষয়ে এখনও আপিল রিভিউ বাকি আছে। ড. কামাল হোসেন ও মঈনুল হোসেনকে নিয়ে এই রিভিউ করার চিন্তা ভাবনা হচ্ছে। কামাল হোসেন রাজি আছেন। এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে হবে।
রিভিউ আপিলের কবে নাগাদ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, এই বিষয়ে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবো। রিভিউ করার সময় এখনও আছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, চেয়ারপার্সনের কারামুক্তির জন্য দুটি পথ আছে। একটি আন্দোলনের দিকে যাওয়া অন্যটি আইনি পথ। আমরা উভয় পথেই চেষ্টা চালিয়ে যাবো। তবে এক্ষেত্রে আন্দোলনকেই আমাদের প্রাধান্য নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেন আদালত। ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদÐাদেশ বাতিল চেয়ে করা আপিলে সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা চলছে। দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত বছরের ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
যুগান্তর
Leave a Reply